স্বাস্থ্য

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় – ঘরোয়া সমাধানে সুস্থ থাকুন

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন? আপনি একা নন। বর্তমান সময়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার একটি অত্যন্ত সাধারণ এবং বিপজ্জনক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ ছাড়াও অনেকেই চাইছেন স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কারণ, প্রতিদিন ওষুধ গ্রহণ যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও তৈরি করে।

আসলে আমরা যদি জীবনযাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনি, যেমন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক চাপ কমানো ও নিয়মিত ব্যায়াম, তবে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ কমানো সম্ভব। এছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপাদান যেমন রসুন, তুলসীপাতা, অশ্বগন্ধা, ও মেথি ইত্যাদি অনেক সময় ওষুধের চেয়েও কার্যকর প্রমাণিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাকৃতিক উপায়ই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে কার্যকর এবং স্বাস্থ্যকর সমাধান। এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হৃদযন্ত্র, কিডনি ও চোখের উপর চাপ কমে এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়।

এই প্রবন্ধে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে একদম ঘরে বসেই ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে নিজের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। প্রতিটি উপায় সহজবোধ্য, কার্যকর এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য। চলুন তাহলে শুরু করা যাক—স্বাস্থ্যকর জীবনের পথে এক ধাপ এগিয়ে।

উচ্চ রক্তচাপ কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক? 

উচ্চ রক্তচাপ, বা হাই ব্লাড প্রেসার, হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্ত প্রবাহ শিরা ও ধমনীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করে। যখন আমাদের হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করে, তখন রক্তচাপ তৈরি হয়। কিন্তু যদি এই চাপ নিয়মিতভাবে বেশি থাকে, তবে তা ধীরে ধীরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে ফেলতে পারে।

এই রোগটির প্রধান সমস্যা হলো এটি অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরের ভেতরে ক্ষতি করে চলে। এজন্য একে “নীরব ঘাতক” (Silent Killer) বলা হয়। আপনি হয়তো বুঝতেই পারবেন না কখন হৃদপিণ্ডে চাপ পড়ে গেছে, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে—সবই ঘটতে পারে উচ্চ রক্তচাপ থেকে।

উচ্চ রক্তচাপের কিছু প্রধান ক্ষতিকর দিক:

  • 🫀 হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি: উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
  • 🧠 স্ট্রোকের সম্ভাবনা: বেশি রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, যার ফলে হতে পারে মারাত্মক স্ট্রোক।
  • 🧂 কিডনি সমস্যা: রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ কিডনির কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে পারে।
  • 👁️ চোখের ক্ষতি: চোখের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে বা স্থায়ীভাবে নষ্টও হতে পারে।

এজন্যই উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা করা মোটেই ঠিক নয়। যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে, তাই রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা এবং জীবনধারায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ লক্ষণগুলো কী?

অনেকেই ভাবেন যে উচ্চ রক্তচাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে উপসর্গ দেখা দেবে, কিন্তু সত্যি হলো—উচ্চ রক্তচাপের কোনও স্পষ্ট বা নির্দিষ্ট উপসর্গ অনেক সময়ই থাকে না। এটি নীরবে শরীরে ধ্বংস চালিয়ে যায়। তবে কখনও কখনও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা উপেক্ষা করা উচিত নয়।

উচ্চ রক্তচাপের কিছু সাধারণ লক্ষণ:

১. মাথাব্যথা:

অত্যধিক রক্তচাপের সময় তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর। মাথার পেছনের দিকটি ভারী ও টানটান লাগতে পারে।

২. ক্লান্তি ঘোলাটে দৃষ্টি:

চোখে ঝাপসা দেখা, দৃষ্টি কমে যাওয়া বা আলোয় চোখে সমস্যা হতে পারে। এই লক্ষণগুলো চোখের রক্তনালীর উপর চাপের কারণে হয়ে থাকে।

৩. বুকে ব্যথা বুক ধড়ফড় করা:

হৃদপিণ্ডে চাপ বেড়ে গেলে বুকে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয় বা দ্রুত হতে থাকে।

৪. ঘাম হওয়া শ্বাসকষ্ট:

স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘাম হওয়া ও অল্প পরিশ্রমে দম বন্ধ হয়ে আসা—এগুলোও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়া:

যদিও এটি খুব কমন নয়, তবুও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হঠাৎ নাক থেকে রক্ত পড়তে দেখা যায়। এটি রক্তচাপের আকস্মিক বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।

৬. অস্বাভাবিক অস্থিরতা বা মাথা ঘোরা:

উচ্চ রক্তচাপে মাঝে মাঝে মাথা ঘোরা, শরীর ভারী লাগা বা হঠাৎ হঠাৎ অস্থির লাগতে পারে।

📌 এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা গেলে, দেরি না করে রক্তচাপ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এবং সবচেয়ে ভালো হয়, যদি নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়সমূহ

যারা ওষুধের বিকল্প বা সহায়ক কিছু খুঁজছেন, তাদের জন্য নিচের উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় গুলো সত্যিই কার্যকর হতে পারে। প্রতিটি পদ্ধতি শুধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেই সাহায্য করে না, বরং শরীর ও মন—দু’টোকেই রাখে সুস্থ।

. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং, বা হালকা দৌড়—এই সব ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।
ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হয় এবং রক্তনালী নমনীয় থাকে, ফলে রক্তচাপ প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসে।

✅ টিপস: সকালে হাঁটার সময় মনোরম পরিবেশ বেছে নিন—এতে মনও শান্ত থাকবে, রক্তচাপও কমবে।

. লবণ কম খান:

অতিরিক্ত লবণ রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
বিশেষ করে ফাস্টফুড, চিপস, প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ খুব ক্ষতিকর।

✅ টিপস: লবণের পরিবর্তে রান্নায় লেবু, আদা, রসুন বা মশলা ব্যবহার করুন—স্বাদ বজায় থাকবে, চাপ কমবে।

. ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ করুন:

DASH (Dietary Approaches to Stop Hypertension) ডায়েট হলো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি বৈজ্ঞানিক খাদ্য পরিকল্পনা।

এই ডায়েটে রাখা হয়—

  • ফল ও সবজি
  • কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার
  • পূর্ণ শস্য
  • বাদাম, মাছ ও ডাল
  • কম চিনি ও চর্বি

✅ টিপস: প্রতিদিন খাবারে কমপক্ষে ৫ রকমের রঙিন সবজি রাখার চেষ্টা করুন।

. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
মাত্র ৫–১০ কেজি ওজন কমালেও রক্তচাপে বড় পরিবর্তন আসে।

✅ টিপস: প্রতিদিন সকালে ওজন মাপুন ও খাবারের রুটিনে পরিবর্তন আনুন।

. ধূমপান অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন:

ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে এবং হৃৎস্পন্দন বাড়ায়। অ্যালকোহলও রক্তচাপ বাড়াতে সহায়ক।

✅ টিপস: ধূমপান ছাড়তে চাইলে ধাপে ধাপে পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং বন্ধুদের সহযোগিতা নিন।

. পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করুন:

ঘুম কম হলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
দিনে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম এবং মেডিটেশন বা প্রার্থনা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

✅ টিপস: রাতে ঘুমানোর আগে ফোন বন্ধ করে দিন, অল্প আলোতে শুতে যান।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কোন খাবার বেশি উপকারী? 

সঠিক খাবার নির্বাচন করা হলো উচ্চ রক্তচাপ কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কিছু খাবার এমন আছে যা রক্তনালীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

১. কলা:

কলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা হ্রাস করে। সোডিয়াম বেশি থাকলে রক্তচাপ বাড়ে। তাই প্রতিদিন এক থেকে দুটি কলা খাওয়া উপকারী।

টিপস: সকালের নাশতায় বা বিকেলের হালকা খাবারে কলা রাখতে পারেন।

২. রসুন:

রসুনে থাকে অ্যালিসিন নামক এক প্রাকৃতিক যৌগ, যা রক্তনালীর প্রসারণে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ কমায়।

টিপস: খালি পেটে ১–২ কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

৩. বিট রুট:

বিট রুটে থাকে নাইট্রেট, যা রক্তনালীকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ কমায়। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধেও কার্যকর।

টিপস: প্রতিদিন এক গ্লাস বিট রুটের জুস পান করতে পারেন।

৪. ওটস:

ওটস ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো। এটি ধীরে হজম হয় বলে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

টিপস: সকালের ব্রেকফাস্টে ওটসের সঙ্গে দুধ ও কলা মিশিয়ে খেতে পারেন।

৫. টমেটো পালং শাক:

এই সবজিগুলিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন C ও K, যা রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

টিপস: প্রতিদিন সালাদ বা তরকারিতে টমেটো ও পালং শাক রাখুন।

৬. বাদাম বীজ:

অল্প পরিমাণে কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ বা ফ্ল্যাক্সসিড খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

টিপস: বিকেলের নাস্তার সময় এক মুঠো মিশ্র বাদাম খেতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য যেসব অভ্যাস বর্জন করা উচিত

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা। অনেক সময় জীবনযাত্রার কিছু ক্ষতিকর দিকই হয় রক্তচাপ বৃদ্ধির মূল কারণ। তাই এগুলো বদলানো জরুরি। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

১. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া:

লবণে থাকা সোডিয়াম সরাসরি রক্তচাপ বাড়ায়। অনেকেই না জেনেই প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড ও চিপসে প্রচুর লবণ গ্রহণ করেন।

🔴 বর্জন করুন: অতিরিক্ত নুন দেওয়া খাবার, ফ্রোজেন মিট, সস, চিপস, ফাস্ট ফুড।

পরামর্শ: প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা তার কম লবণ গ্রহণ করুন।

২. ধূমপান অ্যালকোহল:

সিগারেট ও অ্যালকোহল রক্তনালীর সংকোচন ঘটায়, যার ফলে রক্তচাপ দ্রুত বাড়ে এবং হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

🔴 বর্জন করুন: প্রতিদিন ধূমপান বা নিয়মিত মদ্যপান।

পরামর্শ: ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. ঘুমের অভাব:

কম ঘুম বা অনিয়মিত ঘুম শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কর্টিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

🔴 বর্জন করুন: রাত জেগে থাকা বা অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস।

পরামর্শ: প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

৪. মানসিক চাপ:

দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপও উচ্চ রক্তচাপের একটি বড় কারণ। কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা বা আর্থিক টেনশন এ ক্ষেত্রে দায়ী।

🔴 বর্জন করুন: স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে আলাদা না রাখা।

পরামর্শ: মেডিটেশন, প্রার্থনা, বই পড়া বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।

৫. অলস জীবনযাপন:

যাঁরা সারা দিন বসে কাটান এবং কোনো ব্যায়াম করেন না, তাঁদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

🔴 বর্জন করুন: ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা।

পরামর্শ: প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট হাঁটুন এবং সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করুন।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ঘরোয়া কিছু নির্ভরযোগ্য উপায়

ওষুধ ছাড়াও কিছু ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ কমানো সম্ভব, যদি নিয়মিত এবং সঠিকভাবে তা অনুসরণ করা হয়। এসব উপায় শুধু রক্তচাপ নয়, সার্বিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। সেই সকল উপায়গুলো হলো:

১. গভীর শ্বাস প্রশ্বাস মেডিটেশন:

গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া এবং ধ্যান করলে শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে ও নার্ভ সিস্টেম শান্ত হয়। এটি স্ট্রেস কমায় এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

কীভাবে করবেন: প্রতিদিন সকালে বা রাতে ১০–১৫ মিনিট গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন।

২. গোসলের সময় হালকা গরম পানির ব্যবহার:

হালকা গরম পানি রক্তনালী প্রসারিত করতে সহায়তা করে, ফলে রক্তচাপ কমে আসে।

পরামর্শ: দিনে একবার হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। খুব গরম পানি নয়।

৩. পা ভেজানো গরম পানিতে:

পায়ের রক্তনালীতে চাপ কমাতে এবং ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখতে হালকা গরম পানিতে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখা উপকারী।

টিপস: পানিতে এক চিমটি লবণ দিলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়।

৪. দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা:

শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই রোজ পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।

পরামর্শ: দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। গরমে পরিমাণ বাড়ানো ভালো।

৫. হাসিখুশি থাকা ইতিবাচক চিন্তা:

মনের প্রশান্তি শরীরের রক্তচাপেও প্রভাব ফেলে। রেগে থাকা, হতাশা ইত্যাদি রক্তচাপ বাড়ায়।

পরামর্শ: প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের পছন্দের কাজ করুন—যেমন গান শোনা, গল্প পড়া বা পরিবার নিয়ে সময় কাটানো।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য (FAQs):

১. উচ্চ রক্তচাপ কি পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপায়ে কমানো যায়?

হ্যাঁ, তবে রোগের স্তরের ওপর নির্ভর করে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

২. কতদিনে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে রক্তচাপ কমে?

২–৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখা যায় যদি নিয়মিত অভ্যাস করা হয়।

৩. রক্তচাপ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর প্রাকৃতিক উপায় কোনটি?

নিয়মিত ব্যায়াম, লবণ কম খাওয়া ও স্ট্রেস কমানো—এই তিনটি সবচেয়ে কার্যকর।

৪. উচ্চ রক্তচাপের রোগী কি ডিম খেতে পারবে?

হ্যাঁ, তবে পরিমিতভাবে। দিনে একটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া নিরাপদ।

৫. ঘুমের ঘাটতি কি রক্তচাপ বাড়ায়?

অবশ্যই। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কর্টিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ বাড়ে।

উপসংহার

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় শুধু একটি স্বাস্থ্য টিপস নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনধারা। এই রোগটি যেমন নীরব ঘাতক, তেমনি নিয়মিত যত্ন না নিলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা ও অন্যান্য জটিল রোগে পরিণত হতে পারে। অনেকে মনে করেন শুধু ওষুধ খেলে সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—ওষুধ কেবল অস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে। টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন জীবনযাপন ও অভ্যাসে পরিবর্তন আনা।

প্রাকৃতিক উপায় যেমন সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, স্ট্রেসমুক্ত থাকা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, লবণ গ্রহণে সতর্কতা—এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে আপনি ধীরে ধীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। যেমন সকালে ৩০ মিনিট হাঁটা, দিনে ৮ গ্লাস পানি পান, খাদ্যে পটাশিয়ামসমৃদ্ধ ফলমূল রাখা, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা—এগুলো নিয়মিত চর্চা করলে ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে।

এছাড়া মানসিক প্রশান্তিও রক্তচাপের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন কিছুটা সময় ধ্যান, প্রার্থনা বা নিজের পছন্দের কাজে ব্যয় করলে মানসিক চাপ কমে যায়। আপনি নিজেই অনুভব করবেন শরীর ও মন অনেক বেশি হালকা লাগছে। এটা একটি ধৈর্যের বিষয়—আজ থেকে অভ্যাস শুরু করলে আগামী মাসেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

সবশেষে বলা যায়, স্বাস্থ্য সচেতন প্রতিটি মানুষকেই উচিত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানা এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করা। কারণ সুস্থ হৃদয়ই একটি সুন্দর জীবনের মূল চাবিকাঠি।

Recommended:

 

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকরী টিপস: সহজ কিছু অভ্যাসেই সুস্থ জীবন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *